মাদক কারবারিরা মাদক পাচারে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন

মাদক কারবারিরা মাদক পাচারে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন

মাদক কারবারিরা মাদক পাচারে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন
মাদক কারবারিরা মাদক পাচারে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন

অনলাইন ডেস্ক: অনেক সময় পাচারকারীদের নতুন ও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল দেখে হতবাক হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সবজি পরিবহনে বিশেষ চেম্বার তৈরি, শুকনা মরিচ, জুতা, ইলিশ মাছ, কচ্ছপ ও নারীদের অন্তর্বাসসহ নানা কিছুর ভেতর ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করে আসছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রায়ই স্থল ও জল সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইয়াবাই সবচেয়ে বেশি। আর ইয়াবা পাচারে বাহকদের কৌশলে বিস্মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে এসব মাদক পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জিআই পাইপ, পানির কলসিতে ইয়াবা তৈরির কেমিক্যাল, নারীদের অন্তর্বাস, ছাতা, ইলিশ মাছ ও শুকনা মরিচও রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীতে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার এবং মাদক ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেফতার করার পরেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মশিউর রহমান সময় বলেন, বিভিন্ন পার্সেল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে ইয়াবা লেনদেন হয়ে যাচ্ছে। সেখানে চেকিং এবং স্ক্যানিংয়ের মেশিন না থাকার কারণে ধরাও যাচ্ছে না। অভিযানে আটক কিংবা গ্রেফতারকৃতদের বেশির ভাগই বাহক। মূল হোতারা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে, বিদেশে বসে গডফাদাররা নিয়ন্ত্রণ করে মাদক বাণিজ্য। টেকনাফের কারবারিদের আইনের আওতায় না আনা গেলে শুধু রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মাদক পাচার ঠেকানো সম্ভব নয়, জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, তাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদাহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্তসংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে। আর ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ের বাংলাদেশ-ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্েতর সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি কোটি পিস ইয়াবা। ইয়াবার অবাধ প্রবেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্েতর শান এবং কাচিন প্রদেশে।

মিয়ানমারের ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধুমধুমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালী, বান্দরবানের গুনদুম, নাইখ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। আর হাত বদল হয়ে নানা পম্হায় রাজধানীতে আসছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, ইয়াবার জন্য মিয়ানমারের পছন্দের বাজার ছিল থাইল্যান্ড; কিন্তু আমাদের দেশে এই মাদকে আসক্তের সংখ্যা কল্পনার বাইরে চলে যাওয়ায় ইয়াবার বড় বাজারে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এই বাজারের চাহিদা মেটাতে কক্সবাজার-টেকনাফের স্থল সীমান্তবর্তী ৬০-৭০টি স্পট দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে। কক্সবাজার টেকনাফসংলগ্ন উপকূলবর্তী সমুদ্রে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযানে করে ইয়াবার চালান আসে।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে ৭ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসুদন দাস বলেন, ‘রাজধানীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালীন সংবাদ পাই যে, মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের কসমোপলিটন সেন্টারের সামনে কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা হস্তান্তরের জন্য অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালানোর চেষ্টাকালে এরশাদ উল্লাহ ও লিটনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৭ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় এক জনের নিকট দেওয়ার জন্য এসেছিল।

মতিহার বার্তা/এমআরটি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply